আজ ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর অ্যাড: ওমর ফারুক হত্যার মূল আসামি রাশেদা বেগম (২৮)কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭

সুমন দাস: চট্টগ্রাম 

নিহত ভিকটিম ওমর ফারুফ , বাপ্পি, পেশায় একজন আইনজীবি এবং তিনি চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় বসবাস করে বিগত ৫/৬ বছর যাবত আইনজীবি পেশার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। নিহত ভিকটিম বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করার সুবাধে জনৈকা রাশেদা বেগম নামক একজন মহিলার সাথে তার পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরবর্তী সময়ে তাদের দাম্পত্য কলহের জেরে তারা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সিএমপি পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-১৫(০১)১৭, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন ও দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার মামলা নং -২২(০৪)১৭, ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩৪২/৩২৩/ ৩৮৬/৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড। মামলা পরবর্তী সময়ে নিহত ভিকটিম তার স্ত্রী রাশেদা বেগমের দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করলেও তাদের মধ্যে কলহ চলে আসছিল।পরবর্তীতে গত ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ২০৩০ ঘটিকায় নিহত ভিকটিম আইনজীবী ওমর ফারুফ @ বাপ্পি তার সারাদিনের কার্যক্রম শেষ করে নগরীর চকবাজার থানা এলাকার কে বি আমান আলী রোডস্থ তার ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে। পরের দিন ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ০৬০০ ঘটিকায় বাড়ির দারোয়ান ভিকটিমের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে বাড়ির মালিকসহ ভিকটিমের রুমে গিয়ে ভিকটিমকে হাত-মুখ স্কচটেপ দ্বারা পেঁচানো ও পা দু’টি লাল ফিতা দ্বারা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পরে থাকতে দেখে। বিষয়টি ভিকটিমের বাবা আলী আহমেদ জানার পর ঘটনা স্থলে এসে পুলিশকে সংবাদ দিলে তৎক্ষনাত চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানা পুলিশ কর্তৃক হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইনজীবী ওমর ফারুক @ বাপ্পির মরদেহ উদ্ধার করে। এ বিষয়ে নিহত ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানায় ভিকটিমের স্ত্রী রাশেদা বেগম’কে মূল আসামী করে সর্বমোট ০৬ জন নামীয় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার নং–১৫ তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৭, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।মামলাটি রুজু হওয়ার পর পিবিআই, চট্টগ্রাম কর্তৃক তদন্ত শেষে গত ০৪ এপ্রিল ২০১৮ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে গত ১৫ অক্টোবর ২০২০ইং তারিখে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত বিচারকার্য শুরু করেন । উক্ত হত্যা মামলায় সর্বমোট ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গত ২৬ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখ চট্টগ্রাম মহানগর বিজ্ঞ আদালত নিহত ভিকটিমের স্ত্রী ১। রাশেদা বেগম (২৮), ২। হুমায়ুন রশিদ (২৮) কে মৃত্যুদন্ড, ৩। আল আমিন (২৮), ৪। আকবর হোসেন রুবেল @ সাদ্দাম (২৩) এবং ৫। মোঃ পারভেজ আলী (২৪)’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। রায়ের সময় আদালতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী হুমায়ুন রশিদ এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী মোঃ পারভেজ আলী জেল হাজতে ছিল এবং মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী রাশেদা বেগম ও যাবজ্জীবন কারাদপ্রাপ্ত আসামী আল আমিন এবং আকবর হোসেন পলাতক ছিলেন।মামলাটির রায় ঘোষণার পর থেকেই মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী রাশেদা বেগমসহ অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে লক্ষে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, উল্লেখিত হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক প্রধান আসামী রাশেদা বেগম চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকুলিয়া থানাধীন সৈয়দ শাহ্ রোড এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩০ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী রাশেদা বেগম (২৮), পিতা- জাকির হোসেন, থানা-চকরিয়া, জেলা- কক্সবাজার’কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উক্ত হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত আসামী রাশেদা বেগমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় মাদক সংক্রান্ত ০১ টি এবং কোতয়ালী থানায় হত্যা চেষ্টা ও মারামারি সংক্রান্ত ০১টিসহ সর্বমোট ০২ মামলা পাওয়া যায়।গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     এই বিভাগের আরও খবর