চট্টগ্রাম কণ্ঠ : ডেস্ক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিবেশ স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল জুড়ে আহত-নিহতদের স্বজনদের কান্নার রোল। এছাড়া নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ও মর্গে ছোটাছুটি করছেন অনেকে। অনেক স্বজন রাত থেকে খোঁজাখুঁজি করছেন চমেক হাসপাতালে। নিখোঁজের স্বজনরা মর্গে গিয়ে নিহতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্বজনদের খোঁজ পাননি তারা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) মর্গে লাশের ব্যাগে নিজের আপন ভাই আব্দুর রহমানকে (৩১) খুঁজে বেড়াচ্ছেন আলী নেওয়াজ। আলী নেওয়াজ বলেন, আমার ভাই, ছোট হলেও আমাকে সে আমার সব খেয়াল রাখতো। প্রতিদিন কল দিয়ে আমার খোঁজ খবর রাখতো। আমার সে ভাই কয়? কয়েকটা মেডিকেলে তার খোঁজ করেছি। কিন্তু এখনো তাকে খুঁজে পাইনি। তার ছোট কন্যা শিশুটাকে আমরা কি জবাব দিবো?
বিএম কন্টেইনারে কাভার্ডম্যানের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. সাকিব (১৯)। বিস্ফোরণের পর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুঁজতে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে ভিড় করেন তার স্বজনরা।
সাকিবের মেঝো ভাই আব্দুল হান্নান বলেন, রাতে আগুনে লাগার পর থেকেই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল পর্যন্ত তার মোবাইলে কল গেলেও, সকালের পর থেকে কল যাচ্ছে না। হাসপাতালে এসেছি ভাইয়ের খোঁজে।
একই স্থানে ছোট ভাই মো. মনিরের (৩২) খোঁজে এসেছেন চট্টগ্রামেরই বাসিন্দা আব্দুল করিম। মো. মনির বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ করতেন এফএলটি অপারেটর হিসেবে। গতকাল রাতেও গর্ভবতী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন মো. মনির। চমেক হাসপাতালের সব ইউনিট খুঁজেও ছোট ভাইয়ের সন্ধান পাননি বড় ভাই আব্দুল করিম। খোঁজ পেতে তাই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
নুরুল কাদের চাকরি করতেন ডিপোর ওয়ার্কশপ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। চাচাতো ভাই মনির হোসেন সারা হাসপাতাল চষে ফেলেছেন নুরুল কাদেরের খোঁজে। মেলেনি তার খোঁজও।
আব্দুস সুবহান (৩১) কন্টেইনার ডিপোর আইসিটি সুপারভাইজার হিসেবে চাকরিরত ২০১৩ সাল থেকে। মিলছে না তার খোঁজও। তাই চাচাতো ভাইয়েরা সন্ধান করে চলেছেন আব্দুস সুবহানের।
এ রকমভাবে স্বজনের খোঁজে এসেছেন আরও অনেকে। খোঁজ না পেয়ে ভেঙে পড়ছেন কান্নায়। বর্তমানে একটাই চাওয়া তাদের, প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়া।
এদিকে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জন হয়েছে। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন পাঁচজন। আগুনে আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। তাদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।
বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। বর্তমানে কাজ করছেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর মোট ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা। রোববার (৫ জুন) বিএম কনটেইনার ডিপোতে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে।