মোহাম্মদ জোবায়ের: চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামে হালিশহর ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে (১৩)ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা ঘটে।কিশোরীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় ধর্ষক গ্রেপ্তার,র্যাব-৭।
গত ১৩ মার্চ বর্ণিত ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে হালিশহর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে উক্ত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব। র্যাব-সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর অভিযানে গত রাতে মানিকগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী মোঃ আলমগীর মিয়া (৪৯),জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ’কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ধর্ষণের পর ভিকটিমকে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায় যে, সে এবং ভিকটিমের পরিবার বর্তমানে হালিশহর, চট্টগ্রামের একটি ভাড়াকৃত বাসায় পাশাপাশি বসবাস করছে। ভিকটিমের পরিবারের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ভিকটিম সবার ছোট। ভিকটিমের পিতা পেশায় একজন রিক্সা চালক, মা পোশাক কারখানার কর্মী, বড় ভাই একটি ডেকোরেটরের দোকান এবং ছোট ভাই একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে। মেধাবী ছাত্রী হওয়া উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় তার পরিবার অর্থকষ্টে থাকা সত্তে¡ও তার পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
ঘটনার দিন সকালে প্রতিদিনের ন্যায় ভিকটিম কোচিং শেষে বাসায় আসে। তখন গ্রেফতারকৃত কৌশলে ভিকটিমকে তার বাসায় ডেকে নেয়। অতঃপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। ভিকটিম সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তাকে বাধা প্রদান করে ও এক পর্যায়ে ধর্ষকের হাতের আঙ্গুলে কামড় দেয় এবং তার পিতা মাতাকে জানিয়ে দিবে বলে ভিকটিম জানায়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেফতারকৃত আলমগীর ভিকটিমের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে বাসায় খাটের নিচে তার স্ত্রী যে গার্মেন্টেসে চাকুরী করে সেখানে যায়। সে তার স্ত্রীকে জানায় যে, তার সাথে এলাকার একজনের সাথে মারামারি হয়েছে। এই অজুহাত দেখিয়ে সে তার স্ত্রীসহ ১২.৩০ টায় এলাকা ছাড়ে।
প্রতিদিনের ন্যায় ভিকটিমের মা সকালে পোশাক কারখানায় চলে যান এবং পিতাও রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে যান বলে জানা যায়। দুপুরে ভিকটিমের মা বাসায় খাবার খেতে আসলে তখন স্কুলের দুই সহপাঠী তার মাকে জানায় সে প্রাইভেট পড়ার পর স্কুলে যায়নি।
এরপর তারা ভিকটিমকে খোঁজাখুজি শুরু করেন। কিন্তু কোথাও ভিকটিমের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্যান্য দিনের মতো আসামীর স্ত্রী দুপুরে খাবার খেতে বাসায় আসেনি ও বাসা তালাবদ্ধ এবং আসামীকে ফোন করলে তার মোবাইলটিও বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের বড় ভাই আসামীর তালাবদ্ধ বাসার লাইট ও ফ্যান অন দেখলে সন্দেহের উদ্রেক হয়। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন এবং তখন আনুমানিক রাত ০৯.৩০ ঘটিকার সময় তারা দরজার তালা ভেঙে আসামীর ঘরের ভেতর প্রবেশ করে খাটের নিচে ভিকটিমের হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও ধর্ষণের আলামত দেখতে পেয়েছিল বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আরও জানায়, সে পূর্বে সাভারের একটি গার্মেন্টেসে ডিজাইনের কাজ করত। সে দুটি বিবাহ করেছে। পারিবারিক দ্বন্দের কারণে সে সাভার হতে ০৩ মাস পূর্বে তার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহর বসবাস শুরু করে। তার ২য় স্ত্রী একজন গার্মেন্টস কর্মী। কাজ না থাকায় সে সারাক্ষণ বাসায় অবস্থান করত।
ইতিপূর্বেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর সে পালিয়ে প্রথমে ধামরাই পরবর্তীতে সাভার, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী এলাকায় আত্মগোপণ করে। ইতিপূর্বে সে মিরপুর,সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন গার্মেন্টেসে চাকুরী করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ্যঃ যেখানেই মানবাধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে, নারী অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা নারী নির্যাতন/ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেছে,র্যাব-তৎক্ষণাৎ ভিকটিম অথবা নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জের একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হয়। যা দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ধর্ষকদের ঘটনার ৪৮ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। এছাড়াও ঝিনাইহদ হতে একজন মেধাবী কলেজ ছাত্রী অপহরণের শিকার হয়। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপহরণকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।