আনোয়ারা রিপোর্টার: জাবেদুল
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকার জামাল উদ্দিনের পুত্র আলাউদ্দিন (৩০)। স্থানীয়ভাবে ‘লেংড়া জামাল’ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। এলাকার লোকজন ছাড়াও বহিরাগত মাদক ক্রেতাদের কাছে তিনি ইয়াবা বিক্রি করেন মুঠোফোনে। তার নামে রয়েছে চারটি মাদক মামলা। সর্বশেষ কয়েক মাস আগে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
পতেঙ্গা এলাকায় কিছুদিন পর পর স্থান বদলে ইয়াবা ব্যবসা করেন এক নারী— নাম হাফিজা বেগম (৬০)। বর্তমানে ফুলছড়ি পাড়া এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। পুলিশের তালিকাসূত্রে এই নারী দুর্ধর্ষ মাদক কারবারি। খুচরা ও পাইকারি— দুভাবেই ইয়াবা বিক্রি করেন। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তার মাদক বিক্রির নেটওয়ার্ক। আছে এজেন্ট। তার নামে থানায় মাদকের মামলা রয়েছে একাধিক।
শুধু পতেঙ্গার বিজয়নগর নয়, পতেঙ্গা থানার অলিগলিতে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা ট্যাবলেট। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে নকল ইয়াবাও। মরণনাশক এসব ইয়াবায় আসক্ত পড়ছে যুবক, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ।
জানা গেছে, পতেঙ্গায় এসব ইয়াবা ঢুকছে মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থেকে। অল্পসময়ে লাখপতি ও কোটিপতি হওয়ায় নেশায় যুবকদের অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন এই ব্যবসায়— যাদের বয়স ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
কর্ণফুলী থানার বদলপুর এলাকার মো. জাহেদ বর্তমানে বিজয়নগর এলাকায় বসবাস করছেন। পুলিশের তালিকায় এই জাহেদ একজন ইয়াবাকারবারি। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ এ ব্যবসার মাধ্যমে ফুলেফেঁপে উঠেছে তার সম্পদও। তার নামে মামলা রয়েছে মোটে একটি।
ফুলছড়ির মুছাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয়ে থাকে ইয়াবার গডফাদার। মুছার ইয়াবা ব্যবসার ধরন পুরোপুরি আলাদা। সরাসরি টেকনাফ থেকে বোটে করে ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় চালান এনেই সেগুলো ওইদিনই ঢাকায় পাচার করে দেন ডিপোর কাভার্ডভ্যান ও লরির মাধ্যমে। অবৈধ এ ব্যবসার মাধ্যমে তিনিও গড়েছেন অঢেল সম্পদ। ইয়াবা ব্যবসায় মুছার জড়িত থাকার প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।
চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর পতেঙ্গা থানার হাদিপাড়া এলাকা থেকে ১৩ হাজার ৫৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ রিপন (৪৬) নামে এক কারবারিকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৭)। এর আগে সেপ্টেম্বরে পতেঙ্গা থানা এলাকায় নদীপথে নৌকা থেকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ ১২জন রোহিঙ্গাসহ ১৪ জনকে আটক করে র্যাব।
এছাড়া চলতি বছরের ৮ মার্চ বিক্রিকালে ইয়াবা সহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন পতেঙ্গা থানার বিজয় নগর এলাকার মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র মোজাম্মেল হক (৩০)। তিনি খুচরা ইয়াবা কারবারি। ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল পতেঙ্গা থানার চরবস্তি নবী হোসেনের পুত্র ইকবাল মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হন।
সম্প্রতি পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে বেশকিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া গেছে। পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকায় রয়েছেন দিদার প্রকাশ প্রিন্স দিদার। ইয়াবা বিক্রিকালে পুলিশের তাড়া খেয়ে এখন কৌশল করে ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছেন দিদার, চরবস্তি এলাকার সাদিয়ার বাপ ও বিজয় নগরের পুলিশের সোর্স রহিম।
ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পতেঙ্গায় কুখ্যাতি রয়েছে— দক্ষিণপাড়ার কোনার দোকান এলাকার আলম ও রাজু, মধ্যমপাড়ার আব্দুল প্রকাশ ইয়াবা আব্দুল, মধ্যমপাড়ার আলমগীর প্রকাশ বাঁশখালীর আলমগীর, মধ্যমপাড়া এলাকার মিজান প্রকাশ কালা মিজান, একই এলাকার গোলাল সেরা ১০-এর বাড়ির আলমগীর ও একই বাড়ির আলম প্রকাশ মোটা আলম, কাজির মার বাড়ির জিয়াউল হক প্রকাশ জিওলক, একই এলাকার জয়নাল প্রকাশ ফিটার জয়নাল, দক্ষিণ পাড়ার বড় হাফেজের বাড়ির নাজিম ও নাছির প্রকাশ কেরো নাছির, একই বাড়ির কাইয়ুম ড্রাইভার, একই বাড়ির ওমর প্রকাশ ভান্ডারি ওমর, দক্ষিণ পাড়া এলাকার সিরাজ প্রকাশ হাইওয়ে সিরাজ, একই এলাকার লন্ডনীর বাড়ির শাহজান, মধ্যম পাড়ার নেভাল রোডের মনিরসহ আরও বেশ কয়েকজনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পতেঙ্গা থানার মুসলিমাবাদ জেলে পাড়া, বুম্বে পাড়া, কসাই পাড়া, সোসাইটি, পশ্চিম মুসলিমাবাদ, মুসলিমাবাদ সাগর এলাকা দিনেদুপুরেই হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। সন্ধ্যার পর পরই জেলেপাড়ার অলিগলিতে হাতের নাগালেই মেলে বাংলা মদ ও গাঁজা। দীর্ঘদিন ধরে কথিত এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে মদ ও গাঁজা বিক্রি করে আসছেন জেলেপাড়ার জলাল প্রকাশ জলাল্লে।
এদিকে ওই এলাকায় মদের টাকার যোগান দিতে বেড়ে গেছে বাসা-বাড়িতে মোবাইল চুরির হিড়িক। স্থানীয়দের অভিযোগ, মুসলিমবাদ এলাকায় গত এক বছরে প্রায় প্রায় অর্ধশত পরিবারের বাসা থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানায়, কেউ অভিযোগ করলে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পতেঙ্গা থানায় মাদকসেবন করার একটি মামলাসহ গত এক বছরে ৯৪টি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১১৩ জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৪০ পিস ইয়াবা, গাঁজা ১০০৫ গ্রাম, চোলাই মদ ৪০ লিটার ও আরবি ক্যানের ১৫টি বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আবুল কালাম শাহিদ বলেন, ‘বিষয়টি শুনলাম। এখন খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’