আজ ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়ে আছে হাজার হাজার কন্টেইনার

চট্টগ্রাম রিপোর্টার

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) হিসাব মতে, বর্তমানে ১৯টি ডিপোর ধারণ ক্ষমতা আট হাজার টিইইউস কনটেইনার। সেখানে প্রায় ১৪ হাজার টিইইউস রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার আটকা আছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ডিপোগুলোতে গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টিইইউস রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার থাকে। ধারণক্ষমতা না থাকায় এখন ডিপোগুলোর ভেতরে-বাইরে রফতানি পণ্যের স্তূপ জমে গেছে। এ ছাড়াও প্রত্যেক ডিপোর সামনে খালাসের জন্য দীর্ঘ লাইনে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে দুই-তিনদিন অপেক্ষায় থাকছে।

জানা গেছে, কারখানা থেকে পণ্য উৎপাদনের পর বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা সাপেক্ষে প্রথমে ডিপোগুলোতে আসে। এরপর সেখানে বিদেশি ক্রেতার প্রতিনিধিদের (ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার) হাতে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়। প্রতিনিধিরা পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করার ব্যবস্থা করেন। একই সময়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষ করে ডিপো থেকে বন্দরে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দেয়া হয় কনটেইনার।

রফতানিকারকরা জানান, সাধারণত আইসিডি থেকে জাহাজে তোলার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো কনটেইনার পাঠাতে দুই-তিনদিন লাগে। বর্তমানে সেটি ১০ দিন বা তারও বেশি লাগছে। এ ছাড়াও পুরো রফতানি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন বেশি সময় লাগছে বিদেশি ক্রেতাদের হাতে পণ্য বুঝিয়ে দিতে। ফলে কারখানাগুলো নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে। তা ছাড়া সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে না পারায় কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আবার সমুদ্রবাণিজ্য একটি বন্দরের সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালেশিয়ার বন্দরগুলোতে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, শিগগিরই সেটি কাটার সম্ভাবনা নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে পণ্য রফতানি হয়েছে। বিপরীতে আমদানি হয়েছে কম। করোনা মহামারির পর চীনের রফতানি বাণিজ্যেও গতি এসেছে৷ তারা প্রচুর পণ্য রফতানি করেছে। এ কারণে কনটেইনার এবং জাহাজের সংকট তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে দিন দিন দেশে রফতানি পণ্য পরিবহনে ভয়াবহ জট তৈরি হতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি পণ্য পরিবহনের এই জট কাটাতে বিশেষ ফিডার ভেসেলে করে সরাসরি পণ্য পরিবহন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে রফতানি পণ্যে কিছুটা জট কাটতে পারে। আবার এক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেলে সমুদ্রবাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে বলে আশাবাদী অনেকেই। এ ছাড়াও তারা মনে করেন বড় কনটেইনারের (৪০ ফুট) পরিবর্তনে বিদেশি ক্রেতাদের বুঝিয়ে কিছু পণ্য ছোট কনটেইনারে (২০ ফুট) পাঠানো গেলে জট কিছুটা কাটবে।

 বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘সামনে কী হতে যাচ্ছে আমরা জানি না। ইতোমধ্যে ডিপোগুলোতে ভয়াবহ পণ্য জট তৈরি হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমরা শিপিং অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। আন্তর্জাতিক মহল সোচ্চার না হলে এই জট আরও ভয়াবহ হবে।

বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য রফতানির বিপরীতে আমদানি কম হয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া ও কলম্বোর বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ কারণে কনটেইনার সংকট দেখা দিয়েছে। আবার কনটেইনারের ফ্রেইট চার্জ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। ডিপোগুলোতে রফতানির তুলনায় কারখানা থেকে বেশি পণ্য আসছে। ফলে সেখানে ভয়াবহ জট তৈরি হয়েছে। ডিপোগুলো ভর্তি হওয়ার পর এখন সেগুলোর সামনে পণ্য খালাসের জন্য ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান লম্বা লাইনে ২-৩ দিন অপেক্ষা করছে। এতে করে ডিপোর কর্মক্ষমতাও কমছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুব আলম  বলেন, ‘বিশেষ ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করলে জট কিছুটা কমতে পারে। রফতানি পণ্য পরিবহনে যে জট তৈরি হয়েছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের রফতানি বাণিজ্য পিছিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খাইরুল আলম সুজন জাগো নিউজকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া আমদানি কম হচ্ছে। এ কারণে জাহাজ কম আসছে। জাহাজ কম আসলে যাবে কীভাবে? কারণ আমদানি পণ্য নিয়ে যেসব জাহাজ আসে সেগুলোতে রফতানির পণ্য পাঠানো হয়। আবার বড় জাহাজগুলো এখন অনেকেই চালাচ্ছেন না। এখন যে জাহাজ আসছে সেগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার কনটেইনার। অথচ বড় জাহাজে একসঙ্গে প্রায় ২০ হাজারেরও অধিক কনটেইনার পরিবহন করা যায়। তা ছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর অচলাবস্থার প্রভাবে রফতানি পণ্য পরিবহনে জট তৈরি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     এই বিভাগের আরও খবর