আজ ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কর্ণফুলী পেপার মিলের শ্রমিকদের ২ মাসের বেতন বন্ধ ৫০ কোটি টাকার কাগজ অবিক্রিত

চট্টগ্রাম রিপোর্টার

কাপ্তই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত এশিয়া বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিলে (কেপিএম) ৫০ কোটি টাকার কাগজ অবিক্রিত পড়ে আছে। অথচ টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এই ৫০ কোটি টাকার কাগজ বিক্রি করা সম্ভব হলে সকলের বেতন প্রদানসহ কারখানার অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব হতো। কাগজ বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে উৎপাদন সীমিত রাখা হয়েছে।


সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কেপিএমের গুদামগুলো বর্তমানে রীম কাগজে ভরাট হয়ে আছে। গুদামে কাগজ রাখার জায়গা না থাকায় মেশিন হাউজের বিভিন্ন স্থানে স্তুপ স্তুপ করে কাগজ রাখা হয়েছে।
কর্তপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেপিএম উৎপাদিত কাগজের প্রধান ক্রেতা। প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে যে পাঠ্য বই উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছে সেই কাগজ এনসিটিবিকে সরবরাহ করে থাকে কেপিএম। বর্তমানে এনসিটিবি কেপিএম থেকে কাগজ নিচ্ছে না। ফলে কেপিএমে কাগজের পাহাড় জমে গেছে।


কেপিএম কারখানা সূত্র জানায়, কাগজ উৎপাদনের জন্য কেপিএম নগদ মূল্যে বিদেশ থেকে পাল্প (মন্ড) আমদানি করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য কাঁচামালও কেপিএম নগদ মূল্যে ক্রয় করে থাকে। এনসিটিবি যদি যথাযথ নিয়মে কেপিএম থেকে স্বাভাবিকভাবে কাগজ সরবরাহ নিত তাহলে এভাবে কাগজের পাহাড় জমে থাকত না। পাশাপাশি কেপিএমও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।
কেপিএম কারখানার একাধিক শ্রমিক নেতা বলেন, শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে কাগজ উৎপাদন করছেন। উৎপাদনের স্বার্থে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা বেশি শ্রম দিচ্ছেন। কোনো সরকারি ছুটি, (মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শিশু দিবস, বাংলা নববর্ষ, মে দিবস, ঈদ) যে কোনো পালাপার্বনে ছুটি ভোগ না করে শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তারা উৎপাদনের কাজে ছিলেন। এত পরিশ্রম করার পরও সময়মত বেতন না পাওয়ায় এখন দুঃখ কষ্টে তাদের দিন কাটছে।


শ্রমিক নেতারা জানান, সর্বশেষ গত মার্চ মাসের বেতন প্রদান করা হয়েছিল। মার্চের পর অদ্যাবধি বেতন প্রদান করা হয়নি। এপ্রিল মাসের বেতন সহসা প্রদান করার আশ্বাস দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কবে বেতন প্রদান করা হবে সে তারিখ জানা যায়নি। একটি সূত্র জানায়, কেপিএম সরকারি প্রতিষ্ঠান। এনসিটিবিসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কেপিএম থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনছে। এর ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠান কেপিএম আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহী এবং বিসিআইসির কর্পোরেট ডাইরেক্টর আসাদুর রহমান সমপ্রতি কেপিএম পরিদর্শন করেন। তাঁরা সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলো যাতে কেপিএমের কাগজ নেয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে এখন পর্যন্ত কাগজ বিক্রির ব্যাপারে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     এই বিভাগের আরও খবর