আজ ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আনোয়ারায় হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) ওরশ আগামীকাল ৬ই আষাঢ় ২০ শে জুন (রবিবার)

আনোয়ারা রিপোর্টার : আলবিন

চট্রগ্রামের আনোয়ারায় হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) ওরশ আগামীকাল ৬ই আষাঢ় ২০ শে জুন রবিবার
৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয় বাংলাদেশকে।ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমদের বিজয় শুরু হয় ১২ শতাব্দী থেকে ১৬ শতাব্দীতে। ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলা জয় করার মধ্য দিয়ে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

তৎকালিন চট্টগ্রাম ছিল বৌদ্ধদের শাসন। পরবর্তি ১৩৩৮ সালে সুলতান ফকরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রামে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত করেন। সেই সময়ে আরব দেশ থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রামে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় চট্টগ্রামে অনেক পীর,দরবেশের আগমন ঘটে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক ইসলাম ধর্ম প্রচারিত এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সাহাবী, পীর, আউলিয়া, ফকির, দরবেশগণ সারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রচার এবং প্রতিষ্ঠিত করেন।

সুদূর আরব থেকে চট্টগ্রামে আগত পীর আউলিয়া, ফকির, দরবেশগণের মধ্যে মহান বুজুর্গ অলী হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া অন্যতম। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) ৮৮৬ হিজরী ৭২ বাংলা ১৪৬৬ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কখন বাংলাদেশে আগমন করেন তার ইতিবৃত্ত জানা যায়নি।তবে, তিনি প্রখ্যাত পীর হযরত বদর শাহ (রহঃ) সাথে চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রহঃ) আদি নিবাস ইয়েমেনে। তাঁর পূর্ব পুরুষের পরিচয় জানা না গেলেও বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে তিনি একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি ইসলাম প্রচারে নেমে যান। তিনি ইয়েমেন থেকে প্রথমে ভারতে গৌড় রাজ্যে আগমন করেন। গৌড়রাজ্য তখন শিক্ষা, শিল্প সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। গৌড়রাজ্যে কিছুদিন অবস্থান করার পর হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া পানি পথে চট্টগ্রামে আগমন করেন।

কথিত আছে তিনি তাঁর ব্যবহৃত পাথরকে কিস্তি বানিয়ে পানি পথে চট্টগ্রামে আগমন করেন। তিনি চট্টগ্রামে এসে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত দেয়াং এর পাহাড়ে আস্তানা গাড়েন। দেয়াং এর পাহাড়ে অবস্থান করে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা এবং মোহনীয় শক্তি সবাইকে মোহিত করত।তার অলৌকিক ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে জানা যায়, কোন একদিন নিঝুম নির্জন গ্রামের মাঠে এক বোবা ছেলে গরু, ছাগল দেখা শোনা করছিল। মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) ঐ ছেলেকে ডাকলেন তার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানতে পারে ছেলেটি বোবা। এ অবস্থায় তিনি বোবা ছেলের মুখে তার পবিত্র হাত মোবারক রাখলেন তখন সাথে সাথে ছেলেটি কথা বলতে আরম্ভ করল।তিনি ছেলেটিকে বলল যাও, তোমার পিতা-মাতাকে ডেকে নিয়ে আস। সে তার বাড়িতে গিয়ে কথা বলতে পারলে আশ্চার্য হয়ে মাতা-পিতা ও পাড়া প্রতিবেশীরা সবাই বাবাজান কেবলার কাছে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তাকে থাকার ব্যবস্হা করে দেন। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) অলৌকিক পরিচয় পাওয়ার পর সে সময় দলে দলে মানুষ এসে তাঁর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। তিনি চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। অল্প সময়ের মাঝে তাঁর অসংখ্য ভক্ত এবং মুরীদ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় চট্টগ্রাম অবস্থান করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করে ৯৮৫ হিজরী ৯৭১ বাংলা ৬ আষাঢ় ১৫৬৫ সনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিউরী গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর কবর শরীফ শঙ্খ নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় কবর শরীফ নদীর ভাঙ্গঁনের কবলে পড়লে হযরত মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) বড় উঠানের একজন বিশিষ্ঠ জমিদারকে স্বপ্ন যোগে জানান যে, তাঁর কবর শরীফ বটতলীতে স্থানান্তরিত করা হোক। কিন্তু সেই বিশিষ্ঠ ব্যক্তি স্বপ্নের ব্যাপারটি গুরুত্ব দেয়নি।ফলে তার জমিদারি বিলুপ্ত হয় বলে শোনা যায়। পরবর্তী পর্যায়ে বটতলীর অপর তিন ব্যক্তিকে তিনি স্বপ্নযোগে জানান, ঝিওরী গ্রামের শঙ্খ নদীর পাড়ে আমার কবর ভাঙ্গা অবস্থায় আছে, তার পার্শ্বে একটি পাথরও আছে। তোমরা আমার কফিন ও পাথরখানা নিয়ে বটতলী গ্রামের যেখানে সুবিশাল একটি বটগাছ এবং উলুবন সমৃদ্ধ জায়গা আছে সে স্থানে দাফন কর।ঐ তিন ব্যক্তি স্বপ্নের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দেন এবং স্বপ্নের আদেশ অনুযায়ী তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারা নদীর তীরে গিয়ে দেখতে পান পাথরের ওপর একটি লাশ ভেসে আছে। তারা ঐ লাশ বটতলীতে এনে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে দাফন করে। যেখানে তাঁর লাশ দাফন করা হয় সেখানে এখন তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ গড়ে উঠেছে। তিনি যে পাথর খন্ড করে ভেসে এসেছিলেন তা এখনও পর্যন্ত তাঁর পবিত্র মাজার শরীফে সংরক্ষিত আছে। এই পাথরটিকে অলৌকিক পাথর বলা হয়। বর্তমানে তার মাজার শরীফ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী গ্রামে অবস্হিত।

মোহছেন আউলিয়া (রাঃ) রওজার উত্তর পাশে চাটি জ্বালানো হয়ে থাকে।চট্টগ্রামের জ্বিন-পরি তাড়ানোর কাজে তৈল ও চাটি ব্যবহার করেছেন বলে সেটির নিদর্শন হিসেবে এটি জ্বালানো হয় বলে জানা যায়।এ ছাড়া মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) রওজা শরীফের উপর চন (খড়) দিয়ে মেরামত করতে হয়।মাজারের পাশে তার ব্যবহৃত পাথরটি রয়েছে।রোগ মুক্তি ও বড় বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে পাথরের পানি পান করেন বক্তরা।প্রতিবছর বাংলা ৬ আষাঢ় বটতলীস্থ দরগাহ প্রাঙ্গনে মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।ওরশে লক্ষ লক্ষ আশেক-বক্তদের সমাগম ঘটে।মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) চট্টগ্রামের জমিনকে ইসলামের আলোকে আলোকিত করেন।বর্তমানে তাঁর নামে আনোয়ারা উপজেলার বটতলী গ্রামে স্কুল,কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত।

আনোয়ারা ও বটতলীর নাম উজ্বল করনে তার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

আগামীকাল রবিবার,২০ জুলাই,৬ আষাঢ় বাংলা বটতলীস্থ মাজার প্রাঙ্গনে মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে।এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করেছেন দরগাহ পালা কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     এই বিভাগের আরও খবর